এখন অনেকেই ই কমার্স বিজনেসের সাথে জড়িত, যে যেভাবে পারে সেভাবে বিজনেস করে যাচ্ছে, কারো ওয়েবসাইট আছে, কারো নেই, কারো পেইজের লুক অনেক ভালো, কারো পেইজের লুক একদমই প্রফেশনাল না, কেউ কেউ তার ক্লায়েন্টের উপর সময় ইনভেস্ট করছে, কেউ কেউ ম্যাসেজের উত্তর ই দিচ্ছে দীর্ঘ সময় পর, কারো প্রডোক্ট ফটোগ্রাফি অনেক উন্নত মানের এবং কারোটা উন্নতমানের নয়। এভাবেই চলছে।

এটা সত্যি যে সবাই একইভাবে বিজনেসে ইফোর্ট দিতে পারবে না অথবা একই মান ধরে রাখতে পারবে না, এখানে সময়ের ব্যাপার আছে, বাজেটের ব্যাপার আছে, প্রোডাক্ট সোর্সিং এর ব্যাপার আছে এবং আরো অনেক ব্যাপার আছে। তবে সবাই একই রকম ইফোর্ট না দিতে পারলেও একটা কমন যায়গায় মনে হয় সবাই আসতে পারে তাহলে গ্যাপটা খুব বেশি হয় না এবং ক্রেতার মনে বিশ্বাস জন্ম নেয়ার ব্যাপারটা অনেক সহজ হয়ে যায়।

কিভাবে একটি কমন জায়গায় আসা যায় সেটা নিয়ে কিছু পয়েন্ট তুলে ধরছি

ওয়েবসাইট তৈরি করা

একটি সময় ওয়েবসাইট মানে বিশাল এক ব্যাপার ছিলো, ওয়েবসাইট মানেই লাখ টাকার নিচে কোন কথা নেই, ই কমার্স হলে আরো, কিন্তু এখন ওয়ার্ডপ্রেসের মত CMS প্লাটফর্ম চলে আসার কারনে ওয়েবসাইটের খরচ কিন্তু অনেক কমে গেছে। ১৫-২০ হাজার টাকা দিয়ে আপনি আপনার ছোট বিজনেসের জন্য খুব ভালো মানের একটি ওয়েবসাইট বানিয়ে নিতে পারেন, যা কিনা মার্কেটিং থেকে শুরু করে আরো বিভিন্ন যায়গায় আপনাকে সহযোগিতা করবে। সব থেকে বড় কথা হলো অনেকেই এখন ওয়েবসাইট বানাচ্ছে তার যাদের ওয়েবসাইট আছে তাদেরকেই ক্রেতারা প্রায়োরিটি দিয়ে থাকবে এটাই কিন্তু স্বাভাবিক।

সত্যি কথা হচ্ছে ফেসবুক আসলে ই কমার্স বিজনেস করার প্লাটফর্ম নয়, এখানে শুধু মাত্র আপনি আপনার বিজনেসের মার্কেটিং করতে পারেন, সে দিক থেকে আমরা ফেসবুককে একটি মার্কেটিং চ্যানেল বলতে পারি। তাই একটি ই কমার্স বিজনেসের জন্য একটি ছোট হলেও ওয়েবসাইট প্রয়োজন, না হলে আপনি আপনার নির্দিষ্ট কাস্টোমারের কাছে পৌছাতে পারছেন না, যা কিনা আপনার বিজনেসের জন্য সব দিক দিয়েই ক্ষতিকর।

ফেসবুকের লুক ভালো করা

আমি যখন কোন এড দেয়ার আগে কোন পেইজ অডিট করি,এবং কারো লোগো, কাভার ফটো ইত্যাদিতে পরিবর্তন অথবা মোডিফিকেশনের কথা বললে যা উত্তর আসে সেটা হলো আগে “আগে বুস্ট করি, সেগুলো আস্তে আস্তে করবো” এখানেই ভুল হচ্ছে, “আগে হাত ভাত খাই এরপর হাত ধুবো” এরকম হয়ে গেলো। আপনাকে সুস্থ থাকতে হলে যেমন খাবারের আগে হাত ধুতে হবে, ঠিক তেমন ভাবে আপনার “বুস্ট” থেকে ফলাফল পাবার জন্য “বুস্টের” আগে পেইজের চেহারা পাল্টাতে হবে, আগে “বুস্ট” করলে সম্ভাবনা অনেক বেশি আপনি সেলই পাবেন না, আর সেটা না হলে আপনার বিজনেসটাই বন্ধ হবার অবস্থা হবে। ফেসবুকের পেইজের লুক ভালো থাকা যেমন ফেসবুকের জন্য যেমন জরুরী ঠিক তেমন ভাবে কাস্টমারের জন্যও। তাই আগে পেইজ ঠিক করেন এরপর পেইজে মার্কেটিং।এগুলো করতেও যে খুব টাকা লাগে সেটাও না কিন্তু, এখন অনেক এজেন্সি আছে যারা কম খরচে এই কাজগুলো করে থাকে, তাদের দিয়ে করিয়ে নিতে পারেন। তবে সস্তার ৩ অবস্থা এটাই মাইন্ডে রাখাবেন, কম টাকায় করান তবে এমনও না যেখানে মানসম্মত কিছু পাবেন না।

ক্রেতার উপর সময় ইনভেস্ট করা

টাকা ইনভেস্ট করার থেকে সময় ইনভেস্ট করা বেশি লাভজনক, আপনি যত টাকাই ইনভেস্ট করুন না কেন, আপনি যদি ক্রেতার উপর সময় ইনভেস্ট না করেন তাহলে আসলে আপনি ঘুরে ফিরে একই জায়গায় চলে আসবেন বারবার। তাই ক্রেতার উপর সময় ইনভেস্ট করাটা খুবই জরুরী। কিভাবে হতে পারে এই সময় ইনভেস্টমেন্ট।

১। যত দ্রুত সম্ভব ম্যাসেজ, কমেন্টের উত্তর দেয়ার চেস্টা করেন
২। কেউ যদি শুধু লাইক সিম্বল, ধন্যবাদ, ভালো এই ধরনের কমেন্টে অথবা ইনবক্সও করে উত্তর দিন
৩। একটি অর্ডার হয়ে যাবার পর ক্লায়েন্টের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখুন
৪। সব সময় নতুন প্রোডাক্টের আপডেট ছাড়াও বিভিন্ন ভাবে ক্রেতার সাথে যোগাযোগ রাখুন
৫। ক্রেতার সমস্যার সমাধান দিন
৬। ক্রেতার কাছ থেকে পরামর্শ নিন

আরো বিভিন্ন ভাবে ক্রেতার সাথে সম্পর্ক ধরে রাখুন, একটি রিপিট কাস্টোমারের গুরুত্ব অনেক, আর সেটা আপনাকে বুঝতে হবে।

ফটোগ্রাফি ভালো মানের হতে হবে

ফটোগ্রাফি ভালো মানের হওয়াটা খুবই জরুরী, মনে রাখবেন ক্রেতা আপনার ছবি দেখেই আপনার প্রোডাক্ট অর্ডার করবেন, এখানে আপনাকে ক্রেতার পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে দেখতে হবে, আপনি যখন ছবি তুলছেন তখন কিন্তু মেইন প্রোডাক্ট আপনার কাছেই, আপনি হয়তো সেটা দেখে সন্তুষ্ট কিন্তু আপনাকে দেখতে হবে ছবিটা কেমন আসলো, ছবি দেখে প্রোডাক্টটা বুঝা যাচ্ছে কিনা, ক্রেতা সেটা দেখে বুঝতে পারবে কিনা সেটা সে ব্যাবহার করলে কেমন লাগবে, এখন অনলাইনে তো আপনি শপিং সেন্টারের মত ট্রায়াল রুম দিতে পারবেন না কিন্তু আপনার ফটোগ্রাফির মান যদি ভালো হয় তাহলে ক্লায়েন্ট ট্রায়াল রুমের মত করেই বুঝতে পারবে অনেকটা।

এই ব্যাপারগুলো কি আমরা করছি? যদি করে থাকি খুবই ভালো, তাহলে যারা করছি খুবই ভালো, আর যারা করছি না তারা যারা করছি তাদের থেকে পিছিয়ে আছি, এখন আপনি ই ঠিক করুন পিছিয়ে থাকবেন নাকি অন্তত পক্ষে যতটুকু সম্ভব কম্পিটিশনে নামবেন।