পৃথিবীর সকল সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যে ফেসবুক সব থেকে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। আপনার বিজনেসের লক্ষ্য যা ই হোক না কেন আপনার মার্কেটিং প্ল্যানের মধ্যে ফেসবুক থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এক দিকে আবশ্যক বললেও ভুল হবে না ।
বেসিক থেকে শুরু করুন
ফেসবুক বিজনেস পেইজ তৈরি করতে আপনার পার্সোনাল একাউন্ট থেকে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন
https://www.facebook.com/pages/creation/
সেখানে যাবার পর দুইটা অপশন পাবেনঃ Business or Brand and Community or Public Figure, “Get started” বাটনে ক্লিক করুন।
সব ধরনের বেসিক ইনফরমেশন দিন
আপনি যখন নির্বাচন করলেন আপনি বিজনেস অথবা ব্র্যান্ডের জন্য পেইজ করবেন তখন ফেইসবুকে প্রথমেই আপার বিজনেসের নাম দিতে হবে এবং ক্যাটাগরি।
ক্যাটাগরির উপর ভিত্তি করে আপনি ঠিক করবেন অন্য ইনফরমেশনগুলো আপনি কিভাবে দিবেন। যেমন আপনার যদি খাবারের বিজনেস থাকে আপনি সেখানে ঠিকানা দিবেন, ফোন নাম্বার দিবেন সাথে সাথে কয়টা থেকে কয়টা পর্যন্ত খোলা সেটাও দিতে হবে আপনাকে।
প্রোফাইল ফটো এবং কাভার ফটো এড করেন
সোশ্যাল মিডিয়াতে কাভার ফটো, প্রোফাইল ফটো দেয়া তো কোন কঠিন কাজ না, তবে যে সমস্যাটা দেখা যায় সেটা হচ্ছে আমরা এগুলোর সাইজ না বুঝেই যে কোন একটা ছবি আপলোড দিয়ে রাখি যেটা দেখতে ভালো লাগে না এবং ছবি অথবা ডিজাইনের অনেক অংশ কাটা যায়। তাই সাইজ বুঝে ডিজাইন করে আপলোড করাটা সব থেকে বেশি জরুরী।
ফেসবুক প্রোফাইল ইমেজ সাইজ- 170×170
ফেসবুক কাভার ফটো ইমেজ সাইজ- 820×462
আপনার প্রোফাইল ফটো আইকন হিসেবে আপনার পেইজের প্রতিটা পোস্টের সাথে আসবে এবং যখন আপনি কমেন্ট করবেন সেটার পাশে। মূলত এখানে কোম্পানির লোগোই থাকে এবং সেটাই থাকা উচিত এবং স্কয়ার ডাইমেনশনে সব থেকে ভালো। আপনি প্রোফাইল ফটো 900×900 অথবা এরকম সমান সমান সাইজের ডকুমেন্টে বসিয়ে আপলোড দিতে পারেন।
Cover photo – 820 x 462 pixels
ফেসবুক কাভার ফটো আপনার পেইজের একদম উপরে থাকে, এবং এটা খুব চমৎকার একটা সুযোগ কাস্টমারদের আকৃষ্ট করার জন্য।
ফেসবুকের কাছে কাভার ফটো বিভিন্ন সাইজে বিভিন্ন ডিভাইজে শো করে। 820×312 পিক্সেল ডেস্কটপে এবং 640×360 স্মার্টফোনের জন্য। তবে 820X462 পিক্সেল দুই রকম ডিভাইজের জন্য ভালো কাজ করে থাকে। তবে এটা নিশ্চিত করবেন আপনার প্রধান উপাদান যেমন লেখা, ছবি ইত্যাদি ক্যানভাসের মাঝখানে রাখার জন্য।
আপনার পেইজর ইনফরমেশন সম্পূর্ণ করুন
গুগল ফেসবুক বিজনেস পেইজকে ইন্ডেক্স করে থাকে, তাই আপনি আপনার প্রোফাইল যে লেখা ব্যবহার করে থাকেন সেটার মাধ্যমে আপনার পেইজ গুগলে র্যাঙ্কিং পেতে পারে, আপনার পেইজ হয়তো কেউ ফেসবুকে খুঁজে পাচ্ছে না তবে গুগলে রাঙ্কিং পাবার কারনে গুগল সার্চ ইঞ্জিনে আপনার পেইজ শো করতে পারে।
আপনি যখন ফেসবুকের বিজনেস পেইজ তৈরি করেন তখন ফেসবুকও আপনাকে টিপস দিয়ে থাকে এবং গাইড করে থাকে প্রতিটা ইনফরমেশন ভালো করে ফিলাপ করার জন্য যা কিনা ফেসবুক অলগারিদমের জন্যও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে লেখাগুলো কপি না হয়ে যায় সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে না হলে ফলাফল উল্টাটা আসার সম্ভাবনা অনেক বেশ থাকবে।
যে সব ইনফরমেশন দেয়া খুবই প্রয়োজন
Username– একটি ইউজার নেইম দিলে সেটা আপনার পেইজকে সহজে খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। আপনি দেখবেন আপনি যখন একটি পেইজ ওপেন করেন তখন .facebook.com/ এরপর আপনার পেইজের নাম এরপর অনেকগুলো নাম্বার আসে, যা কিনা আপনার পেইজকে খুঁজে পেতে কঠিন করে দিবে, তাই ফেসবুকে নিজের পেইজের URL নিজের মত করে নিতে পারেবেন। তবে অন্য কারো ইউজার নামের সাথে মিলে গেছে এমন হলে হবে না, কারন ওয়েবসাইটের ডোমেইনের মত এখানেও প্রতিটা URL আলাদা আলাদা করা জরুরী।
Description– ২৫৫ শব্দের মধ্যে আপনার অডিয়েন্সকে আপনার বিজনেস সম্পর্কে সংক্ষেপে জানান।
Categories– এটা মানুষকে আপনার পেইজ খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। ৩টা পর্যন্ত ক্যাটাগরি নির্বাচন করতে পারেন।
Contact information– আপনার বিজনেসের ফোন নাম্বার, ওয়েব এড্রেস এবং ইমেইল এড্রেস যোগ করুন যা কিনা আপনার ক্লায়েন্টের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
Location– আপনার বিজনেসে যদি স্টোর থাকে তাহএ সেটার ঠিকানা দিতে পারেন, আপনি আপনার বিজনেস এরিয়াও নির্ধারন করে দিতে পারবেন।
Hours– আপনার যদি নির্দিষ্ট অফিস টাইম থাকে তাহলে সেটা সেট করে দেন, সেটা দেখে কাস্টোমার আপনার সাথে সে ভাবেই যোগাযোগ করবে
More– এখানে আপনার প্রডোক্টের লিস্ট, প্রাইস রেঞ্জ এবং আপনার প্রাইভেসির পলিসি পেইজের লিঙ্ক দিতে পারেন।
এগুলো সব কিছু “About” সেকশনে দেখাবে,সেখানে আপনি আরো ইনফরমেশন যোগ করতে পারবেন যেমন আপনার বিজনেসের স্টোরি, এওয়ার্ড, মেনু ইত্যাদি।
পেইজে পরিচালনার জন্য আরো মানুষ যোগ করুন
আপ্নার বিজেনেস যখন আস্তে আসতে বড় হিবে তখন আপনার একার পক্ষে হয়তো সম্ভব হবে না পেইজের সব কিছু ম্যানেজ করা, তখন আপনাকে আরো মানুষকে আপনার পেইজের বিভিন্ন রোলে রাখতে হিবে যেন তারা আপনার পেইজের জন্য নির্দিষ্ট কাজটি করতে পারে।
আপনাকে এটা পেইজের সেটিংসে গিয়ে পেইজ রোল সেকশনে গিয়ে আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ড লিস্ট থেকে নাম লিখে নির্বাচন করতে হবে অথবা যারা পেইজে লাইক দিয়েছে তাদেরকে।
একটু দেখি পেইজের রোলগুলো কি কি এবং কার কি ক্ষমতা।
– এডমিন– সব কিছুর এক্সেস থাকে, যে কাউকে পেইজ রোল থেকে রিমুভ করার মত ক্ষমতা রাখে, তাই এডমিন রোল দেয়ার আগে চিন্তা ভাবনা করে দিবেন।
এডিটর– পেইজ এডিট করতে হবে, ম্যাসেজ পাঠাতে পারবে, ফেসবুক এড বানাতে পারবে, ইনসাইট দেখতে পারবে, পেইজে পোস্ট করতে পারবে, তবে পেইজে কাউকে রোল দেয়া অথবা কাউকে রোল থেকে রিমুভ করার ক্ষমতা এডিটিরের নেই।
মডারেটর– কমেন্টের উত্তর এবং রিমুভ করতে পারবে, পেইজের ইনবক্স থেকে ম্যাসেজ পাঠাতে পারবে, এড বানাতে পারবে এবং ইনসাইট দেখতে পারবে। এখানেও কাউকে পেইজ রোল দেয়া অথবা রোল থেকে রিমুভ করার এক্সেস নেই, এই এক্সেস শুধু মাত্র এডমিনের।
এডভার্টাইজার– কোন এডমিন পোস্ট করলো সেটা দেখতে পারবে, এড বানাতে পারবে এবং ইনসাইট দেখতে পারবে, পোস্ট করা অথবা পোস্ট এডইট করা অথবা রিমুভ করার কোন এক্সেস নেই।
এনালিস্ট– এই রোলের ক্ষমতা সব থেকে কম কোন এডমিন পোস্ট করেছে সেটা দেখতে পাবে এবং ইনসাইট দেখতে পাবে।
আপনি কাকে কি কাজ দিবেন সে অনুযায়ী পেইজ রোল সেট করুন।
আপনার বিজনেস পেইজ অপ্টিমাইজ করুন
আপনি যখন সব বেসিক ইনফরমেশন ফিলাপ করলেন আপনি আপনার পেইজকে আরো অপ্টিমাইজেশন করতে পারেন কাস্টোমাইজেশন অপশনের মাধ্যমে।
পেইজে গিয়ে, “More” ড্রপ ডাউন মেনুতে ক্লিক করে এডিট ট্যাব থেকে। এখান থেকে আপনি বিভিন্ন রকম ট্যামপ্লেট নিতে পারবেন আপনার বিজনেসের ধরন অনুযায়ী।
প্রতিটি টেমপ্লেটে একটি বাই ডিফল্ট কল টু অ্যাকশন থাকবে এবং কিছু ট্যাবস থাকবে। যেমন আপনি যদি Restaurants & Cafes এর ট্যামপ্লেট নির্বাচন করেন তাহলে CTA(Call To Action)বাটনে থাকবে “Get Directions” এবং ট্যাবে “menu” “offers” “reviews” “photos” ইত্যাদি থাকবে। আপনি চাইলে এগুলো নিজের মত করে সাজিয়ে নিতে পারবেন।
পেইজ লাইক প্রমোশন করার আগে পেইজে কিছু পোস্ট করুন
আপনি পেইজে লাইকের জন্য এড দিবেন অথবা আপনার ফ্রেন্ডদের ইনভাইট করবেন কিন্তু পেইজে কোন পোস্ট নেই, আপনার ইনভাইট দেখে তারা হয়তো পেইজে যাবে, গিয়ে দেখবে পেইজ খালি তাহলে তারা আপনার বিজনেস সম্পর্কে কোন আইডিয়া হবে না এবং সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে যে তারা আপনার পেইজে লাইক দিবে না, একইরকম পেইড প্রমোশনের খেত্রেও। তাই পেইজে আপনার বিজনেস সম্পর্কিত বিভিন্ন রকম পোস্ট দিয়ে পেইজকে সমৃদ্ধ করেন।
বুঝতেই পারছেন একটি পেইজকে সঠিক ইনফরমেশন দিয়ে সাজানও কতটা গুরুত্বপূর্ণ, ফেসবুকের র্যাঙ্কিঙ্গে থাকার জন্য, গুগলে রাঙ্কিঙ্গে আসার জন্য, অডিয়েন্সকে সহজে পেইজ খুঁজে পাবার ব্যাপার থেকে শুরু করে আরো ছোট ছোট অনেক কিছু দিয়ে আপনার পেইজকে অপ্টিমাইজ করা জরুরী। ফেসবুকের নিয়ম অনুযায়ী যেমন জরুরী তেমন কাস্টোমারের ইম্প্রেশনের জন্যও জরুরী।