আপনি নতুন বিজনেসে এসেছেন অথবা দীর্ঘ সময় ধরে বিজনেস করছেন? একটি কোম্পানি প্রোফাইল থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। একটি মান সম্মত কোম্পানি প্রোফাইল আপনার ক্রেতার অথবা যদি কেউ আপনার বিজনেসে ইনভেস্ট করতে চায় তাদের প্রথম ইম্প্রেশনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এই প্রতিযোগিতার বাজারে একটি ভালো উন্নতমানের কোম্পানি প্রোফাইল আপনাকে এগিয়ে রাখবে। অনেকে বলে থাকে কোম্পানি প্রোফাইল অনেকটা সিভির মত কিন্তু এটা একটা ব্র্যান্ডের জন্য হয়ে থাকে।
যাই হোক, আমার কাছে কোম্পানি প্রোফাইলকে এটার থেকেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। নিচে আলোচনা করা হচ্ছে কোম্পানি প্রোফাইল কি এবং কেন এটা বিজনেসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
কোম্পানি প্রোফাইল কী?
কোম্পানি প্রোফাইল হচ্ছে একটি প্রফেশনাল পরিচিতি আপনার কোম্পানি সম্পর্কে। আপনার অডিয়েন্সকে আপনার প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস সম্পর্কে জানানো। এর সাথে সাথে আপনার শক্তিশালী পয়েন্ট, কাজের অতীত রেকর্ড এবং কেন আপনার কোম্পানির সাথে অন্যকেউ কাজ করবে। মোট কথা হচ্ছে আপনার কোম্পানি সম্পর্কিত যাবতীয় সব তথ্য এখানে থাকবে।
আপনার বর্তমান এবং নতুন ক্রেতা আপনার কোম্পানি প্রোফাইল দেখবে সাথে সাথে ইনভেস্টর, সার্ভিস প্রদানকারী সংস্থা, সাপ্লাইয়ারস, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, বিজনেস পার্টনার ইত্যাদি আপনার কোম্পানি প্রোফাইল দেখবে বিভিন্ন প্রয়োজনে।
কোম্পানি প্রোফাইলকে অবহেলা করার কোন জায়গা নেই যেখানে কোম্পানি প্রোফাইল আপনার কোম্পানি সম্পর্কে একটি ভয়েজ তৈরি করছে, আপনাকে সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে এবং আপনার কোম্পানির প্রফেশনাল ইমেজ তুলে ধরছে। এটা শক্তিশালিভাবে বলা যায় কোম্পানি প্রোফাইল একটি শক্তিশালি মার্কেটিং টুল যা আপনার বিজনেসকে প্রমোট করবে।
কোম্পানি প্রোফাইল-এ কি কি থাকে
নিচে কিছু উদাহারন দেয়া হলো যে কোম্পানি প্রোফাইল এ মুলত কি কি থাকে।
# কোম্পানির বেসিক তথ্য-
এখানে আপনার কোম্পানির বেসিক ইনফরমেশন থাকবে যেমন আপনার কোম্পানির নাম, কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কোথায় আপনার কোম্পানি অবস্থিত, যোগাযোগের মাধ্যম ইত্যাদি।
# মালিক পক্ষ এবং ম্যানেজমেন্ট টিম সম্পর্কে ধারনা-
আপনার কোম্পানির মালিকানাকে আপনি ব্রেক ডাউন করতে পারেন, কিভাবে প্রতিটা মালিক এই কোম্পানিতে জড়িত, কে কি ধরনের কম্পানির শেয়ার পাচ্ছে এবং ম্যানেজমেন্টের মধ্যে প্রধান ভূমিকা কারা পালন করছে এবং কিভাবে করছে।
# কোম্পানির ইতিহাস-
আপনার কোম্পানিকে অন্য কোম্পানি থেকে আলাদা করে উপস্থাপন করতে চাইলে সব থেকে কার্যকরী উপয়ায় হচ্ছে আপনার বিজনেসের শুরুর গল্প অডিয়েন্সের জানানো। এখানে আপনি বিভিন্ন ইন্টারেস্টিং গল্প নিয়ে আসতে পারেন এবং আপনার বিজনেসের কালচার তুলে ধরতে পারেন।
# মিশন স্টেট্ম্যান্ট এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
মিশন স্টেট্ম্যান্ট আপনার কোম্পানি প্রোফাইল এ থাকবে এভাবে যে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা নিয়ে কোম্পানিকে কাজ করতে হচ্ছে এবং কিভাবে সমাধান করছেন। ভবিষ্যতের পরিকল্পনাতে আপনি কিভাবে আপনার বিজনেসকে গড়ে তুলবেন, আপনার পরিকল্পনা কি ইত্যাদি তুলে ধরবেন।
# প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস-
এই সেকশনে আপনি আপনার প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস সম্পর্কে বিস্তারিত থাকবে।অডিয়েন্স একটি বেসিক ইনফরমশন পাবে এখান থেকে।
# হাইলাইট-
আপনি আপনার কোম্পানির অর্জন, এওয়ার্ড, সার্টিফিকেট, স্পেশাল প্রজেক্ট, টেস্টিমনিয়াল ইত্যাদি বিস্তারিত থাকতে পারে।
আপনার কোম্পানি প্রোফাইল কেন জরুরী
আগে যেমন আলোচনাতে এসেছিলো যে কোম্পানি প্রোফাইল অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারন এটা আপনার কোম্পানি সম্পর্কে অনেক কিছু জানায়। বিজনেসকে প্রমোট করার জন্য এটা চমৎকার মার্কেটিং টুল হিসেবে কাজ করবে এবং প্রতিযোগিতার এই ভিড়ে আপনার কোম্পানিকে আলাদা ভাবে উপস্থাপন করবে।
নিচে আরো কিছু তথ্য দেয়া হলো যার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন কেন একটি কোম্পানি প্রোফাইল ওয়েবসাইট আপনার জন্য প্রয়োজনীয়।
১। মার্কেটিং টুল হিসেবে কার্যকরী
একটি মানসম্মত কোম্পানি প্রোফাইল আরমদায়ক প্রথম ইম্প্রেশন তৈরি করে। আর শুধু মাত্র যে প্রথম ইম্প্রেশন সেটা না আপনি সব সময়ের জন্য একটি ভালো ইম্প্রেশন পাবেন।
আপনার প্রোফাইল চমৎকার ভাবে মার্কেটিং টুলস হিসেবে কাজ করবে। আর সে জন্য আপনার কোম্পানিকে বিভিন্ন মাধ্যমে ভিজিবল করতে হবে যেমন প্রিন্ট আইটেমে, ডিজিটাল মিডিয়াতে যেমন ইমেইল, ওয়েবসাইট এবং প্রফেশনাল সোশ্যাল নেটওয়ার্ক যেমন লিঙ্কডীন। এটা শুধুমাত্র আপনার জন্য বেনিফিট নয় এটা কাস্টোমারদের জন্য একটি বড় সুবিধা তারা যে ধরনের তথ্য চায় সে রকম তথ্য তারা একই জায়গায় পেয়ে যাবে।
২। আপনার কোম্পানিকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলতে সাহায্য করে
যাদের নিজেদের কোম্পানি প্রোফাইল আছে তারা অবশ্যই মার্কেটে এগিয়ে থাকবে যাদের কোন প্রোফাইল নেই। কারন একটাই কোম্পানি প্রোফাইল এর মাধ্যমে আপনি আপনার অডিয়েন্সের কাছে আপনার কোম্পানি সম্পর্কে অনেক বিস্তারিত তথ্য জানাতে পারবেন যার মাধ্যমে অডিয়েন্স বুঝতে পারবে আপনার কোম্পানি কি, কি চায়, কেমন ভাবে কাজ করছে ইত্যাদি।
আপনার যদি কোন কোম্পানি প্রোফাইল না থাকে তাহলে আপনার অডিয়েন্স কিভাবে আপনার সম্পর্কে জানবে আর যদি কিছু না ই জানে তাহলে তাহলে আপনার প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস সম্পর্কে ভ্যালু কিভাবে যোগ করবে।
তাই একটি সুন্দর করে ডিজাইন কয়া, তথ্যমূলক এবং এঙ্গেজমেন্ট কোম্পানি প্রোফাইল আপনার বিজনেসকে অনেক উপরে নিয়ে যেতে সক্ষম।
৩। এওয়ারনেস গড়ে উঠবে এবং সাথে বিশ্বাসযোগ্যতা
প্রতিযোগীতার এই পৃথিবীতে আপনার ব্র্যান্ড অবশ্যই অন্যদের থেকে আলাদা হতে হবে। কোম্পানি প্রোফাইল এর মাধ্যমে আপনার ব্র্যান্ড প্রমোট করা একটি কার্যকরী উপায়।
৪। যখন আপনার কোম্পানি গড়ে উঠবে আপনি আত্মবিশ্বাসি হবেন
বিজনেস পার্টনার এবং কাস্টোমার আপনাকে মার্কেটে থাকা অন্য কোম্পানি থেকে আরো বেশি বিশ্বাস করবে।
৫। প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস নিয়ে ক্রেতা আইডিয়া পাবে
একটি কোম্পানি প্রোফাইল এর মাধ্যমে আপনি আপনার কাস্টোমারকে আপনার বিজনেস সম্পর্কে জানাতে পারবেন। কোম্পানি প্রোফাইল একটি জানালার মত যেখানে আপনার ক্রেতা, বিজনেস পার্টনার, ইমপ্লি ইত্যাদি জানতে পারবে যে আপনি কি করছেন, কেমন অফার দিচ্ছেন ইত্যাদি।
৬। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সাহযোগিতা করবে
একটি কোম্পানির জন্য একজন ট্যালেন্ট খুঁজে বের করা সব সময় ই প্রায়োরিটি লিস্টে থাকে যদিও এটা প্রায় প্রতিটি কোম্পানির জন্য চ্যালেঞ্জের ব্যাপার।
একটি কোম্পানি প্রোফাইল থাকলে সেটা যারা ট্যালেন্ট আছে তাদের পক্ষে কোম্পানি সম্পর্কে বুঝাটা সহজ হয়। আর কোম্পানি প্রোফাইল ব্যাপারটা এমন নয় যে এটা আপনি কাউকে একবার ই দেখাবেন। এটা একটি ফান্ডামেন্টাল ডকুমেন্ট যার মাধ্যমে আপনার কোম্পানির বিশ্বাস যোগ্যতা প্রকাশ পায়, আত্মবিস্বাস বাড়ে এবং অনেক মানুষকে আপনার সাথে কাজ করতে আগ্রহী করা যায়।
কিছু টিপস-
-সিম্পল রাখেন- এটা নিশ্চিত করতে হবে আপনার কোম্পানি প্রোফাইল যেন খুব সহজেই বুঝা যায় এবং অনেক জটিল কিছু দিয়ে এটাকে সাজানো ঠিক হবে না।
– টার্গেট অডিয়েন্স-
ডিজাইন, লেখার স্টাইল ইত্যাদি তৈরি করার সময় আপনার অডিয়েন্স কারা এটা চিন্তা করে নেন। প্রতিটা অডিয়েন্স গ্রুপের বিভিন্ন রকমের পছন্দ, অপছন্দের ব্যাপার থাকে তাই আপনাকে আপনার টার্গেট অডিয়েন্স এবং তাদের পছন্দের ব্যাপারগুলো চিন্তা করে কাজ করতে হবে
– ক্রিয়েটিভ হোন-
বিভিন্ন গ্রাফিক, এনিমেশন, ভিডিও ইত্যাদি যোগ করে ক্রিয়েটিভিটির সাথে কাজ করুন, এখন যুগ পরিবর্তন হয়েছে তাই শুধুমাত্র লেখার মাধ্যমে একজন ক্রেতাকে আকৃষ্ট করা বেশ কঠিন।
– সঠিক তথ্য দিন-
আপনি হয়তো আপনার কোম্পানিকে মানুষের কাছে অনেক বড় দেখাতে গিয়ে ভুল ইনফরমেশন দিতে পারেন অথবা যা সঠিক নয় সেরকম তথ্য দিতে পারেন যে কিনা ভবিষ্যতের জন্য অবশ্যই সঠিক নয়, যখন কাস্টোমার আপনার কথার সাথে কাজে মিল পাবে না তখন ই সমস্যাগুলো তৈরি হবে।
উপরের লেখা থেকে কিছুটা হলেও বুঝাতে পেরেছি যে আপনার কোম্পানি প্রোফাইল তৈরি করাটা আপনার বিজনেসের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন উপরে লিখেছি কোম্পানি প্রোফাইল আপনি বিভিন্ন মিডিয়াতে তৈরি করতে পারবেন তবে আমাদের সাজেশন থাকবে একটি ওয়েবসাইট ডেভেলপ করানো, কোম্পানি প্রোফাইল খুব সিম্পল ওয়েবসাইট হয়ে থাকে তাই খরচও খুব বেশি প্রয়োজন হয় না আর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রোফাইল তৈরি করলে একটি ডোমেইন এর ভিতর আপনার ওয়েবসাইট টি থাকবে এবং সেটি পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে একজন ইউজার খুব সহজেই বের করে দেখতে পাবে যে সুযোগটি সব রকম মিডিয়াতে আপনি পাবেন না। আর ওয়েবসাইট হলে আপনার নিজের কোম্পানির নামে একটি ডোমেইন নিতে পারবেন যা কিনা হবে একদমই আপনার নিজ্বস্ব, কিন্তু সোশ্যাল সাইটগুলাতে এই ধরনের সুবিধা সম্ভব নয়। একটি কোম্পানি প্রোফাইল এবং সেটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে করার গুরুত্ব বুঝাতে পেরেছি আশা করি। আমাদের সাথেই থাকবেন।