Entrepreneur Mindset কেমন হওয়া উচিত?

উদ্যোক্তা হতে হলে কী করতে হবে? আপনি যদি ব্যবসায় আগ্রহী হয়ে থাকেন তবে নিশ্চয়ই এই প্রশ্নটি আপনার মনে এসেছে। কিন্তু প্রশ্নটি আসলে এমন হওয়া উচিত যে উদ্যোক্তা হতে হলে কেমন হতে হবে? কারণ উদ্যোক্তা হওয়ার কোনো জাদুর কাঠি নেই, কোনো বিশেষ কাজ নেই যা করলেই আপনি রাতারাতি একটি ব্যবসা দাঁড় করাতে পারবেন। বরং বেশ কিছু গুণাবলির সমন্বয়ে একজন মানুষ উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠে। সেই গুণাবলিগুলো কী কী? চলুন জেনে নেয়া যাক।

১) প্রবলেম-সলভিং

একটি স্টার্ট-আপ বিজনেসের যাত্রা শুরু হয় কোনো একটি সামাজিক সমস্যার সমাধান হিসেবে। যেমন ট্রাফিক জ্যাম সমস্যায় দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোর প্রয়াসে এসেছে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস Pathao. একসময় মানুষ এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় কিছু পাঠাতে চাইলে তাকে নিজে গিয়ে দিয়ে আসতে হতো নয়তো কোনো রিলেটিভের মাধ্যমে জিনিস পত্র এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠাতে হতো। আর এই সমস্যা দূর করার জন্য কুরিয়ার সার্ভিস নামে একটি সার্ভিস চালু হলো যা এখন সারা বাংলাদেশ ব্যাপি বিস্তৃত। এরকম বাস্তবমুখী সমস্যা সমাধান করার চিন্তাধারা থাকতে হবে। কারন বিজনেসের ক্ষেত্রে যেই প্রোডাক্ট বা সার্ভিস মানুষের সমস্যার সমধান দিয়ে থাকে সেই বিজনেস অতি দ্রুত গ্রোথ নিয়ে আসতে পারে। তবে সমস্যা সমাধানের এই যাত্রা এখানেই কিন্তু শেষ নয়। ব্যবসায় প্রতিনিয়ত নানা সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় উদ্যোক্তাকে। তাই প্রবলেম সলভিং মেন্টালিটি থাকা আবশ্যক। আর প্রবলেম সলভিং এ তাকে হতে হবে সৃজনশীল। যেকোনো সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। কারন বিজনেসে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম বাঁধা বিপত্তি লেগেই থাকে। এসকল বাঁধা বিপত্তির নিষ্পত্তি করার সক্ষমতা এবং সৃজনশীলতা থাকতে হবে। 

 

২) আত্মনির্ভরশীলতা

একজন উদ্যোক্তাকে অবশ্যই আত্মনির্ভরশীল হওয়া চাই। যার আত্মবিশ্বাস যত বেশি তার সাফল্য তত বেশি। সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পরিকল্পনায় অন্যের উপর নির্ভর না করে পথ খুঁজতে হবে নিজেকেই। ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স একজন উদ্যোক্তার প্রয়োজনীয় গুনাবলির মধ্যে অন্যতম। মানসিকভাবে নিজেকে প্রাণবন্ত বা মোটিভেটেড রাখার দায়িত্বও নিতে হবে নিজেকেই। কারন বিজনেস শুরুর প্রথম থেকে শুরু করে সবসময় নানান রকম সমস্যা দেখা দিবে, যেগুলো অন্যের উপর নির্ভর করে সমাধান করা যাবে না। নিজেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং তার সমাধান বের করতে হবে। আর এ জন্য প্রয়োজন সর্বদা আত্মনির্ভরশীল থাকা। নিজের প্রতি নির্ভরশীল থাকতে না পারলে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে টিকে থাকা দুষ্কর হয়ে পরবে। একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে আপনাকে অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী হতে হবে।

৩) ব্যর্থতাকে সাদরে গ্রহণ করা

উদ্যোক্তা হওয়ার পূর্বশর্ত হলো ব্যর্থতাকে সাদরে গ্রহণ করা ও তাকে শিক্ষা হিসেবে নেয়ার ক্ষমতা থাকা। একজন উদ্যোক্তার পথচলায় ব্যর্থতার সাথে সাক্ষাৎ হবে বারবার। ভেঙে না পড়ে বরং এ থেকে শিখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। থাকতে হবে ব্যর্থতার পরও মানসিকভাবে স্বাভাবিক থাকার শক্তি। আজকের বাংলাদেশের সফল বিজনেস Pathao এর প্রতিষ্ঠাতা হুসাইন ইলিয়াস -এর জীবনে প্রথম উদ্যোগ কিন্তু পাঠাও নয়। এর পেছনে রয়েছে অনেকগুলো ব্যর্থ উদ্যোগের অজানা গল্প। সফল উদ্যোক্তাদের প্রত্যেকের জীবনেই ব্যর্থতার গল্প রয়েছে। ব্যর্থতার মাধ্যমেই তারা শিক্ষা গ্রহন করছেন এবং সেই শিক্ষা থেকেই ধীরে ধীরে এগিয়েছেন সফলতার দিকে। এবং তারা সফল হয়েছেন, তাই সর্বদা মনে রাখতে হবে একজন উদ্যোক্তার জীবনে ব্যর্থতা থাকবে আর এখান থেকেই শিক্ষা নিয়ে সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে হবে। 

৪) উদ্দেশ্যপ্রবণ হওয়া

একজন উদ্যোক্তাকে অবশ্যই হতে হবে উদ্দেশ্যপ্রবণ। লক্ষ্যহীন উদ্যোগ বৈঠাহীন নৌকার মতোই ভেসে বেড়ায় গন্তব্য ছাড়া। উদ্যোক্তাকে জানতে হবে সে আসলে কী করতে চায় এবং কীভাবে করতে চায়। উদ্যোগ নেয়ার সাথে সাথেই তার মাষ্টার প্ল্যান রেডি করতে হবে। সেই প্ল্যান বা স্ট্রাটেজি অনুযায়ী আগাতে হবে। হুঠহাট সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো কাজ করা যাবে না। যাই করা হবে তার সঠিক উদ্দেশ্য ঠিক করতে হবে এবং সেই উদ্দেশ্যে পৌঁছানোর সঠিক প্ল্যান করতে হবে।

৫) অভিযোজন ক্ষমতা

ব্যবসা মানেই নানা প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হওয়া। যে প্রতিনিয়ত এমন নতুন সব চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে পারে সেই টিকে থাকে দিনশেষে। যেমন কোভিড-১৯ মহামারী সব বিজনেসের জন্যই ছিল এক কঠিন সময়। অনেক ব্যবসাই সে সময় খুব দ্রুত অনলাইনে শিফট করে ও অন্যান্য নানা কৌশল অবলম্বন করে নতুন অবস্থার সাথে খাপ খাওয়ানোর মাধ্যমে টিকে থেকেছে। আর যারা পারেনি এমন অনেক ব্যবসা ঝরে পড়েছে। তাই একজন উদ্যোক্তার অভিযোজন ক্ষমতা ভালো থাকতে হবে। তাছাড়া অনেক সময় অনেক উদ্যোগ কাজ নাও করতে পারে সেক্ষেত্রে উদ্যোগে পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। নতুন উদ্যোগ গ্রহন করতে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। 

৬) সহযোগী মনোভাব

আফ্রিকান একটি প্রবাদ আছে, “দ্রুত যেতে হলে একা যান, কিন্তু বহুদূর যেতে হলে একসাথে যান।” ঠিক তাই, একা পথ চলে ব্যবসা নিয়ে অনেক দূর যাওয়া সম্ভব নয়। টিম-আপ করে একসাথে এগিয়ে যাওয়াই হবে একজন উদ্যোক্তার লক্ষ্য। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আপনার লিডারশিপ মনোভাব থাকতে হবে। আপনার টিমের সাথে সহযোগী আচরণ করতে হবে। আপনি একা একা বেশি দূর যেতে পারবেন না, তাই টিম নিয়ে কাজ করতে হবে। 

৭) গ্রোথ মাইন্ডসেট

প্রতিদিন একটু একটু করে এগিয়ে যাওয়াই হলো অনেকদূর যাবার মূলমন্ত্র। ব্যবসায় সফল হওয়ার কোনো শর্টকাট পথ নেই। চাই দীর্ঘদিনের পরিশ্রম, সাধনা আর অভিজ্ঞতা। বিজনেসে একটি টার্ম হলো প্রিম্যাচ্যুর স্কেলিং, অর্থাৎ অকালে অতিরিক্ত এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য ব্যবসায় চাপ সৃষ্টি করা। এটি বিশ্বব্যাপী স্টার্টআপ ঝরে পড়ার এক অন্যতম কারণ। তাই রাতারাতি উপরে ওঠা নয় বরং এগিয়ে যাবার ধারাবাহিকতা রক্ষা করাই হওয়া উচিত একজন উদ্যোক্তার লক্ষ্য। এবং প্রতিনিয়ত বিজনেস সম্পর্কে আপ টু ডেট থাকা। কারন আপনি যখন বিজনেস নিয়ে বর্তমান পরিস্তিতি সম্পর্কে আপডেটেড ধারনা রাখবেন তখন আপনি আপনার বিজনেসের গ্রোথ নিয়ে আসতে পারবেন।

৮) দূরদর্শী হওয়া

উদ্যোক্তা হিসেবে আপনাকে অবশ্যই দূরদর্শী চিন্তা করতে হবে। যেমন ধরুন যদি কেউ করোনাভাইরাসের সময়ে লকডাউনকে কেন্দ্র করে কোনো সার্ভিস বিজনেস শুরু করে তবে তা কোনো দূরদর্শিতা নয়। কারণ অতীতের মতো এই মহামারীও একদিন শেষ হবে এবং পরিস্থিতি পালটে যাবে যেখানে আর ঐ সেবার চাহিদা থাকবে না সেই বিষয়টি আমলে নেয়া আবশ্যক। একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে যদি নিজেকে পরিচিত করতে চান তাহলে শুধু সিজনাল প্রোডাক্ট বা সার্ভিস এর বিজনেস উদ্যোগ না নিয়ে এমন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিয়ে বিজনেস উদ্যোগ গ্রহন করা যার মার্কেট ডিমান্ড সবসময় থাকবে। আর এর জন্যই প্রয়োজন দূরদর্শী হওয়া।

৯) শেখার মানসিকতা

সফল উদ্যোক্তাদের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো তারা সবাই বই পড়ুয়া। ওয়ারেন বাফেট দিনের ৮০ শতাংশ সময় ব্যয় করেন বই পড়ে, অন্যদিকে বিল গেটস সপ্তাহে অন্তত একটি বই পড়েন। শেখার কোনো সীমা নেই। নিয়মিত বই পড়া কিংবা অন্য যেকোনো মাধ্যমে শেখার মানসিকতা থাকলে একজন উদ্যোক্তার চিন্তাধারা তুখর হয়। ফলে তিনি নতুন নতুন আইডিয়া ভাবতে পারেন এবং নিজের ব্যবসায় কাজে  ইম্পিলিমেন্ট করতে পারেন।

১০) ইতিবাচক মনোভাব

উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ইতিবাচক মনোভাব থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপাতভাবে মন্দের মধ্য থেকেও ভালো কিছু খুঁজে পাওয়া, ব্যর্থতার আড়ালে সফলতার গন্ধ পাওয়া, সমালোচনার মধ্যে থেকে শিক্ষা উপকরণ খুঁজে নেয়া হলো ইতিবাচক মনোভাবের লক্ষণ। 

 

পরিশেষে আবারও বলতে হয়, উদ্যোক্তা হতে হলে কী করতে হবে? উত্তর হলো বিশেষ কিছু গুণাবলির সমন্বয়ে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হতে হবে। তাহলে আপনার ব্যবসার যাত্রা হবে অনেক সহজ ও সুন্দর।

 

Posted in Blog

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*